এই বিষয়টার উত্তর দেওয়ার আগে জানা যাক যে গোত্র আর বর্ণ কী?
১. গোত্র —
আপত্যাম্ পৌত্রপ্রভৃতি গোত্রং — পাণিনি।
পুত্র-পৌত্র-প্রপৌত্র ইত্যাদিদের পরম্পরায় হয় গোত্র।
ইংরেজিতে এর অর্থ clan, বাংলায় বংশ। একটি পিতৃতান্ত্রিক সমাজে পিতাকেই মূল ধরে তার বংশ গণনা করা হয়। ভারতীয় উপমহাদেশে এই প্রথা অনুযায়ী, আদি পিতার নাম স্মরণ রেখে বংশের গতি নির্ধারণ করা হয়। কেউ যদি বলে যে সে ভরদ্বাজ গোত্রের অন্তর্ভুক্ত তাহলে বুঝবেন যে, মহাঋষি ভরদ্বাজ তার বংশের আদি পিতা যার বংশধর সে। তাদের মধ্যে অবিচ্ছেদ্য রক্তের সম্পর্ক রয়েছে।
২. বর্ণ—
চাতুর্বর্ণ্যং ময়া সৃষ্টং গুণ কর্মবিভাগশঃ। — শ্রীকৃষ্ণ
কর্মের গুণ অনুযায়ী ভগবান শ্রীকৃষ্ণ চার বর্ণ সৃষ্টি করেছেন। তাতে তিন গুণের মধ্যে সাত্ত্বিক গুণ ধারী গণ — ব্রাহ্মণ, রাজসিক গুণ ধারী গণ —ক্ষত্রিয়, রজঃ ও তম মিশ্রিত গুণ ধারী গণ —বৈশ্য ও তম গুণ ধারী গণ —শূদ্র।
গীতার অষ্টাদশ অধ্যায় অনুযায়ী তাদের কাজ —
১. ব্রাহ্মণ — শাস্ত্র পাঠ, জ্ঞান হিন্দুহিন্দু চর্চা, চিকিৎসা, গবেষণা, রাজ্য চালনায় সাহায্য করা অথবা রাজ্য পরিচালনা আদি কাজ করবে।
২. ক্ষত্রিয় — রাজ্য চালনা, প্রতিরক্ষা ইত্যাদি।
৩. বৈশ্য —ব্যবসা, কৃষি কাজ গোরক্ষা আদি।
৪. শূদ্র — পরিচর্যা।
এতে বংশের কোন সম্পর্ক নেই। কারণ শাস্ত্র মতে —
জন্ম জায়তে শূদ্র সংস্কারৎ দ্বিজ উচ্চতে।
বেদ পঠনাৎ ভবতে বিপ্রঃ ব্রহ্ম জানাতি ইতি ব্রাহ্মণ।।
অর্থাৎ, জন্ম কালে সকলেই শূদ্র, সংস্কার তাকে বানায় দ্বিজ, জ্ঞান লাভে ও বেদ পাঠে হয় বিপ্র আর পরব্রহ্মকে জানতে পারলে হয় ব্রাহ্মণ।
এতে গোত্র বা বংশের কোন সম্পর্ক নেই। যদি থাকত, তাহলে ক্ষত্রিয় রাজা গাদির পুত্র ঋষি বিশ্বামিত্র কখনো ব্রাহ্মণ হতে পারতেন না, শূদ্রের পুত্র রত্নাকর কখনো ঋষি বাল্মিকী হতে পারতেন না। ব্রাহ্মণের পুত্র পরশুরাম কখনো ক্ষত্রিয় হতে পারতেন না, এবং অত্যাচারী রাজাদেরও দমন করতে পারতেন না।
কাজ সর্বদা যোগ্যতা নির্ভর, বংশ নির্ভর নয়। এবং যোগ্য ব্যক্তির হাতেই কাজ দেওয়া উচিত। স্বয়ং বিচার করুন। :)
ধন্যবাদ।